বিশেষ প্রতিবেদন: প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং মনমোহন সিং। ভারতে কংগ্রেসি রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য দুটি নাম। একজন সক্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ইন্দিরা গান্ধীর জমানায় শিক্ষা এবং পাণ্ডিত্যকে কাজে লাগিয়ে কংগ্রেসি রাজনীতিতে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। দলের এবং সরকারের বিপদে বারবার ত্রাতা হিসেবে এগিয়ে এসেছেন। যদিও কংগ্রেসি রাজনীতির নিয়ম অনুযায়ীই দলে তাঁর যোগ্যতার ঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। বারবার আঘাত পেয়েছেন। তবু আমৃত্যু নিজের সততা এবং জ্ঞানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ আস্থা। অন্যদিকে, অপরজন ছিলেন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কোনও বিতর্কেই তাঁর নাম কখনও জড়ায়নি। রাজীব–উত্তর সময়ে গান্ধী পরিবারের একান্ত অনুগত ছিলেন। তাই গান্ধী পরিবারও তাঁকে দু–দু’বার প্রধানমন্ত্রী করেছে।
রাজনীতি এবং রাজনীতির বাইরে দীর্ঘদিন পাশাপাশি কাজ করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং মনমোহন সিং। তাই দু’জনের মধ্যে ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কর্মজীবনে দু’জনের জীবনে নানা ঘটনা ঘটেছে। সেইজন্য প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু যে মনমোহন সিংকে স্পর্শ করবে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই সোমবার রাতেই শোক প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, ‘প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে মনটা দুঃখে ভরে গেল। স্বাধীন ভারতের এক মহান নেতা চলে গেলেন। আমি আর তিনি একসঙ্গে বহুদিন কাজ করেছি। তাঁকে আমি ভালো করেই চিনি। দেশের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ শ্রদ্ধা। আমি তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাই।’
এই দু’জনকে নিয়ে দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে দীর্ঘদিন ধরে একটা মুখরোচক চর্চা চলেছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও মনমোহন সিং নাকি এই বঙ্গসন্তানকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতেন। আসলে প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর অধীনে কাজ করেছেন মনমোহন। তাই এই সম্বোধন তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনা রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলত প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করছেন, তা মানতে পারেননি তিনি।
তাই সে কথা সোজাসুজি বলে দিয়েছিলেন মনমোহনকে। তাঁর কথায় শেষ পর্যন্ত ‘প্রণবজি’ বলে ডাকা শুরু করেন মনমোহন। অন্যদিকে, মনমোহন সিংকে সবসময় ‘ডক্টর সিং’ বলেই ডেকেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অধীনে কঠোর পরিশ্রম করলেও ইউপিএ মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যের মতো সোনিয়া গান্ধীর দিকেই বেশি দৃষ্টি ছিল প্রণববাবুর। আসলে জন্মসূত্রে ইতালীয় হলেও ভারতীয় রাজনীতিতে সোনিয়া গান্ধীর বিচক্ষণতা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন।
তাই মনমোহন জমানায়ও মন্ত্রিসভায় অমিতশক্তির অধিকারী ছিলেন প্রণব। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রতিরক্ষা, অর্থ এবং বিদেশ মন্ত্রকের। দুর্নীতি দমন থেকে ২০০৮ সালের অর্থনীতি চাঙ্গা করার প্যাকেজ, মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সব সমস্যা থেকে মুক্ত করতে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এগিয়ে এসেছেন ত্রাতা হিসেবে। ইউপিএ সরকারের যাবতীয় নীতি নির্ধারণ ও সমস্যা সমাধানে ‘গ্রুপ অফ মিনিস্টার্স’–এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন।